দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে দাপট দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশের নারীরা। ২০২২ সালে মেয়েদের জাতীয় দলও সাফের সেরা হয়। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার টানা দ্বিতীয়বার দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সেরা হয়েছে বাংলার বাঘিনীরা।
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া ডালভাতে পরিণত হয়েছে। গত এক দশক ধরে। যে কারণে এই পর্যায়ে ফুটবলকে সাফের গন্ডি পেরিয়ে এশিয়ার লেভেলে নিয়ে যেতে কাজ করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ধারাবাহিক সাফল্য পেলেও মেয়েদের ফুটবল দাঁড়িয়ে আছে দুর্বল ভীতের উপর। ঘরোয়া লিগ ঠিকমতো হয়না। বসুন্ধরা কিংস একসময় বড় বাজেট নিয়ে এসেছিল মেয়েদের ফুটবলে। কিন্তু গত মৌসুমে তারা দল গঠন করেনি। শুধু তাই নয়, বড় দলগুলোর তেমন আগ্রহ নেই নারী ফুটবল নিয়ে! আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পেতে প্রতিযোগিতামূলক লিগ আয়োজন করা জরুরি। এতে করে পারফরমেন্সের উন্নতি ঘটবে। মোহামেডান, আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেলের মতো বড় দলগুলোকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। লিগ জমজমাট করতে না পারলে মেয়েদের পারফরমেন্সেরও উন্নতি হবে না। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার গন্ডি পেরিয়ে এশিয়ার পথে পা বাড়ানো অসম্ভব হবে।
এবার নেপালে সাফ চলাকালীন সময় মেয়েদের খেলা নজর কেড়েছে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের। আসরের সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমাকে ঘিরে আগ্রহ আছে অনেকের। বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারের মতে, ডিফেন্ডার আফাঈদা খন্দকারের অমিত সম্ভাবনা আছে আরও বড় পর্যায়ে যাওয়ার। তার খেলার গুণমুদ্ধ ইংলিশ কোচ। সঠিক পরিচর্যা পেলে আফঈদা এশিয়ান লেভেলে ভাল করবেন বলে বিশ্বাস বাংলাদেশ কোচের। দুর্দান্ত সাফল্যের পর মেয়েদের বেতনের বিষয়টি সামনে এসেছে। ঠিকমতো বেতন পাননা সাবিনা-মারিয়া-মনিকারা। যে কারণে আরও ভাল ফলাফল পেতে মেয়েদের আর্থিক নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে বলে সবার মতামত। আর্থিকভাবে লাভবান হলে মেয়েদের পারফরমেন্সে আরও উন্নতি হবে। ২০২২ সালে মেয়েদের জাতীয় দল সাফে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়। কিন্তু অবাক করা বিষয়, দেশের ইতিহাসের সেরা সাফল্যের পর তখন মেয়েদের দীর্ঘ নয় মাস বসে থাকতে হয়। এখনো খুব বেশি খেলতে পারছেন না সানজিদা-সাবিনারা। এবার তিনমাস মাঠের বাইরে থেকে মুকুট ধরে রাখার মিশনে নেপাল যায় বাংলার বাঘিনীরা। এরপরও দুর্দান্ত নৈপূণ্যে শিরোপা ধরে রেখে ঘরে ফিরেছেন বাংলার অদম্য সোনার মেয়েরা।
অনেক চ্যালেঞ্জ জিতে, অনেক বাধা পেরিয়ে, মনস্তাত্বিক লড়াই উতরে সাফের শিরোপা ধরে রাখা বাংলাদেশ জাগিয়েছে দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার আশা। একটু চওড়া হচ্ছে এশিয়ান কাপে খেলার স্বপ্ন। গতবার বাছাইয়ে দল যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল, তাতে বোঝা গেছে পথটা মোটেও সহজ নয়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে টানা দুইবারের জয়ী দলের বড় মঞ্চে নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর প্রত্যয় থাকতেই হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। ঠিক এই ব্যাপারটি নিয়েই বলেছেন কোচ পিটার বাটলার। তার মতে, দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত আরও বড়। এ প্রসঙ্গে বাটলার বলেন, ‘সবাই শুধু সাফ, সাফ করে। কেন লক্ষ্যটা আরও বড় করে না? এশিয়ান পর্যায়ে খেলার কথা কেন ভাবে না?’ এশিয়ান কাপের মূলপর্বে এখনও খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। সবশেষ ২০২২ এর বাছাইয়ে ইরান ও জর্ডানের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচেই হেরেছিল ৫-০ ব্যবধানে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে ভারত ছাড়া এখন পর্যন্ত খেলতে পেরেছে কেবল নেপাল।
এবারের সাফ দিয়ে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়েছে। ভারত ও নেপালের চেয়ে এখন কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ। এই অগ্রগামীতা ধরে রেখে এশিয়ান চ্যালেঞ্জ নেয়ার এখনই উত্তম সময় বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।