আগামী ২৪শে জুলাই জাপানের রাজধানী টোকিওতে যে অলিম্পিক গেমস হতে যাচ্ছে, তার জন্য অ্যাথলিটদের প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ জমে উঠছে।
আশাবাদী ভারতীয় অ্যাথলিটরা মেডাল জয়ের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবিরে তাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারত ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকস থেকে এখন পর্যন্ত ১৩টি মেডাল জিতেছে, যার মধ্যে ৫টি পেয়েছে নারী প্রতিযোগীরা।
অন্যদিকে, সিডনি অলিম্পিকসের আগে ভারত যে ১৩টি মেডাল জিতেছিল, তার সবগুলোই পেয়েছিল পুরুষরা।
সিডনির আগে ও পরের এই পার্থক্য প্রমাণ করে ভারতের ক্রীড়া জগত একটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে।
এখন প্রথমবারের মত বিবিসি, ভারতের নারী ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি দেবার লক্ষ্যে ‘দ্য বিবিসি ইন্ডিয়ান স্পোর্টসওম্যান অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
ভারতীয় নারী ক্রীড়াবিদদের অসাধারণ অবদানকে এবং ভারতীয় ক্রীড়া জগতে নারীদের অর্জনকে সম্মানিত করার লক্ষ্যে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
চার বছর আগে রিও অলিম্পিকসে, কুস্তিগির সাকশি মালিক এবং ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পি ভি সিন্ধু ভারতের পক্ষে দুটি মেডাল জয় করেন।
অলিম্পিক কুস্তিতে মালিক প্রথম ভারতীয় নারী যিনি কোন মেডাল জয় করেন। অন্যদিকে, জিমনাস্ট দীপা কর্মকার যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ প্রতিভা সিমোন বাইলসের বিরুদ্ধে পাল্লা দিয়ে ভল্ট প্রতিযোগিতায় মেডাল জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন।
নারী প্রতিযোগীদের জন্য না হলে, ভারতের অ্যাথলিটরা ১৯৯২ সালের অলিম্পিকসের পর প্রথমবারের মত খালি হাতে দেশে ফিরতেন।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত ২০১২ সালের অলিম্পিকসে, ভারতের ছয়টি মেডালের মধ্যে দুটি জয় করেন নারীরা, যার মধ্যে ছিল অলিম্পিকস মুষ্টিযুদ্ধে কোন ভারতীয় নারীর প্রথম মেডাল। বক্সার মেরি কোম পেয়েছিলেন সেই মেডাল।
লন্ডন অলিম্পিকসে অন্যান্য অর্জনের মধ্যে ছিল ব্যাডমিন্টনে সাইনা নেওয়াল-এর মেডাল, যা ছিল অলিম্পিক ব্যাডমিন্টনে যে কোন ভারতীয় প্রতিযোগীর প্রথম মেডাল।
এশিয়ান গেমসে সাফল্য
অলিম্পিকস-এর বাইরে, ২০১৯ সালে ক্রিকেটার হামানপ্রিত কর প্রথম ভারতীয় (নারী বা পুরুষ) হিসেবে ১০০টি টি২০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক অতিক্রম করেন। একই সাথে, ক্যাপ্টেন হিসেবে (নারী বা পুরুষ) ভারতকে দুটো ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে নিয়ে যাবার কৃতিত্ব অর্জন করেন মিথালি রাজ।
দু’বছর আগে ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে, ভারতের মোট ৫৭টি মেডালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (২৮) জয় করেন নারী অ্যাথলিটরা।
তাদের পরিশ্রম এবং অর্জন ভারতের ক্রীড়া জগতে নারীদের ক্রমবর্ধমান অবদান জনসমক্ষে তুলে আনতে সাহায্য করছে।
তবে তাদের সাফল্য ঘিরে আলোচনা পুরুষদের নিয়ে আলোচনার অনেক নিচেই থেকে যাচ্ছে।
বিভিন্ন কারণ, যেমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, অবকাঠামোর অভাব, সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি এই ভারসাম্যহীনতা তৈরির জন্য দায়ী।
এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, ভারতীয় নারীরা কুস্তি এবং বক্সিং এর মত ক্রীড়ায়, যেগুলোকে অতীতে পুরুষ-কেন্দ্রিক বলা হত, নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছেন।
উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্য, যেখানে প্রতি ১০০০ ছেলের বিপরীতে মাত্র ৯২৪জন মেয়ে আছে, লিঙ্গ অসমতার জন্য পরিচিত। কিন্তু এই ক্ষুদ্র রাজ্য থেকে কয়েকজন নারী অলিম্পিয়ান তৈরি হয়েছে।
এই সবের মানে হচ্ছে, ভারতীয় নারী অ্যাথলিটদের জন্য খেলা বদলে যাচ্ছে, যে গল্প বলা এবং তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
কেন এই পুরস্কার?
টোকিও ২০২০ অলিম্পিকসের আগে নারী এবং তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে বিবিসির যে উদ্যোগ, দ্য বিবিসি ইন্ডিয়ান স্পোর্টসওম্যান অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার তারই অংশ।
বিজয়ী কীভাবে নির্বাচন করা হবে?
বিবিসি মনোনীত এক জুরি প্যানেল ভারতীয় স্পোর্টসওম্যানদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই জুরি প্যানেলে আছেন ভারতের সুপরিচিত ক্রীড়া সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ এবং লেখক।
যে পাঁচজন স্পোর্টসওম্যান এই জুরি প্যানেল থেকে সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তাদেরকে মনোনয়ন করা হয় চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য, যেখানে জনগণ অনলাইনে ভোট দিতে পারবেন।